লসে জানালেও লাভে চুপচাপ
পুঁজিবাজারে লস হলেই বিনিয়োগকারীরা এসএমএস দিয়ে আমাকে বলেন, কিন্তু লাভ হলে বলেন না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। একই সঙ্গে বলেন, একটু কঠিন হলে অনেকেই আমাকে চরিত্রহীন করতে উঠে পড়ে লাগে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিএসইসির মাল্টিপারপাস হল রুমের ‘ইনভেস্টমেন্ট টুলকিটস’এর প্রকাশনা উদ্বোধী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। “ইনভেস্টমেন্ট টুলকিটস” বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) প্রথম প্রকাশনা এবং দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন মূলক বই। বইটির লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সজিব হোসেন।
শিবলী রুবাইয়াত বলেন, লস হলে বিনিয়োগকারীরা আমাকে যখন বলেন তখন আমি তাদের বলি যে আপনার পোর্টফোলিও কীভাবে ম্যানেজ করবেন। কোনটা কিনবেন বা বিক্রি করবেন সেটা আমি কি করে বলব, সেটা আপনাকেই ভেবে চিন্তে করতে হবে। বিনিয়োগ আপনার, তাই বিনিয়োগ সিদ্ধান্তও আপনার।
কাউকে খুশি করা অসাধ্য ব্যাপার মন্তব্যে করে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, কেউ কখনো খুশি হয় না। অখুশি লোকের সংখ্যাই বেশি। পুঁজিবাজারে স্বার্থে যদি কখনো একটু কঠিন হই, তাহলে আমাকে অনেক কিছুই শুনতে হয়। এমনকি অনেকেই আমাকে চরিত্রহীন করতে উঠে পড়ে লাগে। এই জন্য সবসময় বিপদে থাকি। কখন যে কি হয়ে যায়। তারপরও থেমে নেই কাজ করে যাচ্ছি। কাজে অনেকে বাধা জানিয়ে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, এখন আমাদের কাজে অনেকেই বাধা দিচ্ছে। সামনে আরও দিবে জানি। এসব বাধায় আমরা থেমে যাব না। কাজের মাধ্যমে সামনে এগিয়ে যাব।
বইটির মোড়ক উন্মোচন প্রসঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, ‘ইনভেস্টমেন্ট টুলকিটস’ বইটি বিনিয়োগকারীদের জ্ঞানভাণ্ডার ও বিনিয়োগ সহায়তা আরো সমৃদ্ধ করবে। এধরনের একটা বই পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীসহ সবার জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করবে। জানা অজানা বিভিন্ন তথ্য এই বই দিবে সবাইকে, লেখক একজন তরুণ ও উদীয়মান গবেষক। তার বই সবাইকে সহযোগিতা করবে। অনলাইনে বইটি বিআইসিএম ওয়েবসাইটে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
আরও বলেন, ফাইন্সিয়াল লেটারেসি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। না বুঝে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সামগ্রিকভাবে পুঁজিবাজারে এর প্রভাব পড়ে। তাই কমিশন বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষত করা এবং এক্ষেত্রে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দূর করার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছে। বন্ড মার্কেট প্রসঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত বলেন, বাংলাদেশে বন্ড মার্কেট আরও আগে শুরু হলে আরও ভালো হতো। বন্ড মার্কেট নিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, “আমাদের শহরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা ফাইন্সিয়াল লেটারেসিকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। এজন্য পাঠ্যক্রমে বিষয়টি যুক্ত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে কারগরি বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বোর্ড এর সাথে দ্রুতই আলোচনায় বসবে কমিশন। এসময় তিনি বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে “ইনভেস্টমেন্ট টুলকিটস” বইটির বাংলা অনুবাদ করে প্রকাশ করতে বলেন।”
স্বাগত বক্তব্যে বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মাহমুদা আক্তার বলেন, “অর্থনৈতিক অগ্রগতির এই যাত্রায় বিনিয়োগ শিক্ষা ও আর্থিক স্বাক্ষরতা প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিনিয়োগকারীদের জন্য ইনভেস্টমেন্ট টুলকিটস বইটি প্রকাশ করা বিআইসিএমের জন্য একটি বড় অর্জন। এই টুলকিটটি একজন বিনিয়োগকারীকে তার বিনিয়োগ প্রোফাইল তৈরি করতে, বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণে সাহায্য করবে। বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন।”
বইটি সম্পর্কে লেখক অধ্যাপক মো. সজিব হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের বাজারে বিনিয়োগের উপর লেখা অনেক বই আছে কিন্তু সেগুলো উন্নত বাজার বা আন্তর্জাতিক বাজারের দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নয়। বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগে একজন বিনিয়োগকারীর দেশের পুঁজিবাজার কীভাবে কাজ করে, প্রাসঙ্গিক নিয়ম-কানুন, বিনিয়োগ সরঞ্জাম ইত্যাদি কাস্টমাইজডভাবে বোঝা প্রয়োজন। এই চিন্তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার এই বই লেখা। এটা মূলত বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগ টুলকিটস।”
অনুষ্ঠানে ভোট অব থ্যাংকস প্রদান করেন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) নাজমুস ছালেহীন। সঞ্চালনায় ছিলেন বিআইসিএম জনসংযোগ কর্মকর্তা খালেদা জেসমিন।
মন্তব্য করুন