অর্থ সহ নানান সমস্যায় পুঁজিবাজার পতন
আর্থিক সংকট সহ নানান সমস্যায় ঈদের পর থেকেই নিম্নমুখী দেশের পুঁজিবাজার। এসব সমস্যার কারনে রেগুলেটরদের শত চেষ্টায় উত্থানে ফিরেনি পুঁজিবাজার। সকলের ইতিবাচক সব উদ্যোগ যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে পুঁজিবাজার। কোন উন্নয়নই কাজেই লাগছে না পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে। সেই ধারায় গত;রবিবারও সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয় পুঁজিবাজার। এনিয়ে ঈদের পর টানা ৯ কার্যদিবস পুঁজিবাজার পতন।;
এদিন (রবিবার) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতন হয়। এদিন দুই স্টকের অধিকাংশ কোম্পানি শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। এদিন ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতা ছিল কয়েক গুন বেশি। ফলে শেয়ার বিক্রির চাপের হিড়িক ছিল।;
পতন প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের (ঈদুল আযহা) পর ৯ কার্যদিবস পুঁজিবাজারে লেনদেন হয়। ওই ৯ কার্যদিবস ধারাবাহিক সূচক পতন হয়। ওই সময় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতন হয় ৩১৪ পয়েন্ট। অপরদিকে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই পতন হয় ৯৪৪ পয়েন্ট। ওই কার্যদিবসে ডিএসইর মূলধন কমেছে ২০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। সিএসইতে মূলধন কমেছে ১৯ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। ওই সময় লেনদেনও মন্দা।
আরও বলেন, গত;রবিবার ডিএসইতে ৮৪ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরের পতন হয়। এদিন সিএসইতে ৭৭ ভাগ কোম্পানির দরের পতন হয়। এর আগের সপ্তাহে (পাঁচ কার্যদিবস) ৮৪ ভাগ কোম্পানির দর পতন হয়। তারও আগের সপ্তাহে (তিন কার্যদিবস) পতন হয় ৬০ ভাগ কোম্পানির দর। সিএসইতেও গত সপ্তাহে (পাঁচ কার্যদিবস) ৮৩ ভাগ কোম্পানির দরের পতন হয়। আগের সপ্তাহে (তিন কার্যদিবস) পতন হয় ৬৪ ভাগ কোম্পানির দরে।;
পতন প্রসঙ্গে অনেকেই (বিজ্ঞ বিনিয়োগকারী) বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের ধাক্কা পড়েছে পুঁজিবাজারে। এছাড়া আর্থিক সংকটও রয়েছে। এসব কারণে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতন চলছে। এই দরপতনে বিপাকে পড়েছেন সাধারন বিনিয়োগকারীরা।;
দরপতন পতন প্রসঙ্গে মতিঝিলের বিভিন্ন সিকিউরিটিজ হাউজের আট কর্মকর্তা বলেন, ঈদের পর থেকেই পুঁজিবাজার মন্দা চলছে। তবে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার পর এর নেতিবাচক প্রভাব বেশি পড়েছে পুঁজিবাজারে। লোডশেডিং ঘোষণার দিন গত সোমবার সূচক বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় গত মঙ্গলবার। ওই দুইদিনের তুলনায় পরে দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার কিছুটা ছোট হয়ে এসেছে। সব মিলে ঈদের পর ৯ কার্যদিবস লেনদেন হয়। যার প্রতি কার্যদিবসই লেনদেন মন্দা ও সূচক পতন গুনতে হয়। এসময় বিক্রয়ের চাপ বহুগুন বেড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, রেগুলেটরদের নানান উন্নয়নে পর কয়েকদিন পুঁজিবাজার ভাল দেখালে পরের কয়েক দিন মন্দায় থাকে। উত্থান-পতনের এ বৃত্তে পুঁজি হারানোর রেকর্ড বেশি। রেগুলেটরদের কোন উন্নয়নেই সোজা হয়ে দাঁড়াতে পাচ্ছে না পুঁজিবাজার। ঘুরে ফিরে পতন দীর্ঘ হওয়ায় অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। অবশ্য মাঝে মাঝে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্তৃপক্ষদের বিভিন্ন আশ্বাসে হঠাৎ করেই পুঁজিবাজার ভালো হয়। সেই আশ্বাসে কয়েক কার্যদিবস ঘুরেও দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। কিন্তু দিন বদলে ঘুরেফিরে পুঁজিবাজার পতনে গড়াগড়ি। ঈদের পর থেকেই পুঁজিবাজার মন্দা চলছে। এর মধ্যে যোগ হয় গত দুই কার্যদিবসের (সোমবার ও মঙ্গলবার) বড় ধরনের পতন। সেই পতন পরে দুই কার্যদিবসে ;(বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ফের ছোট হয়ে এসেছে। সেই পতন রবিবারেও অব্যাহত।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার দুই স্টকের ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর পতন হয়। এর মধ্যে ডিএসইর ৮৩ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং সিএসইর ৭৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দরে পতন হয়। অপরদিকে ডিএসইর ১০ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং সিএসইর ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর উত্থান হয়।
এদিন ডিএসইতে প্রায় সব খাতের কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এর মধ্যে সিরামিক, জ্বালানি শক্তি, বিবিধ, পেপার, সেবা আবাসন এবং চামড়া খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। এদিন ওষুধ রসায়ন ৯৪ শতাংশ, আইটি ৯১ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং ৯০ শতাংশ, খাদ্য আনুষঙ্গিক ৯০ শতাংশ, বিমা ৮৯ শতাংশ, ব্যাংক ৮৭ শতাংশ, সিমেন্ট ৮৬ শতাংশ, ভ্রমন অবসর ৭৫ শতাংশ, টেলিকম ৬৭ শতাংশ, পাট ৬৭ শতাংশ, বস্ত্র খাতের ৬৯ শতাংশ এবং নন ব্যাংকিং আর্থিক খাতের ৫৬ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়। শেয়ার দর পতনের একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতেও।
ডিএসইতে গত;রবিবার লেনদেন হয় ৪৭০ কোটি ৯৭ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ৬৭৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৪২টির, কমেছে ৩১৮টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২২টির। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৪ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫২ দশমিক ৪৪ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৩২ দশমিক ৬৭ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১৬ দশমিক ৭২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৬৮ দশমিক ১৫ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩২৮ দশমিক ৩৬ পয়েন্টে।
অপর পুঁজিবাজার সিএসইতে গত;রবিবার লেনদেন হয় ১৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার লেনদেন হয়েছিল ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৬৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৪৪টির, কমেছে ২০৭টির এবং পরিবর্তন হয়নি ১৮টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৬০ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮০৭ দশমিক ৪৮ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১৩ দশমিক ৩১ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৩১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৯৭ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ;১১ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩০৪ দশমিক ৪২ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ১২০ দশমিক ৫১ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৬৬৭ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১২১ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।
মন্তব্য করুন