পালিত পশু নিয়ে দিশেহারা খামারিরা

দেশে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর পানি বাড়ছে। অন্তত দশটি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব নদীর তীর উপচে ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। এমন অবস্থায় বন্যার্ত পরিববারগুলো আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে। তবে সবচেয়ে বড় বিপদ হয়ে এসেছে গৃহপালিত পশু। বিশেষ করে কোরবানির উদ্দেশে ঘরে লালিত পালিত ছাগল, গরু, মহিষ নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন খামারিরা।

বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে যোগাযোগ অবকাঠামো, ঘরদোর, ফসল, শাকসবজির পাশাপাশি গবাদি পশুর ওপরে বড় ধরনের আঘাত এসেছে। কোরবানির হাটে বিক্রি করার জন্য যারা গবাদি পশু লালন-পালন করেছেন তারা লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন।। ইতোমধ্যে দুর্গত শতাধিক এলাকায় কোরবানিসহ অন্যান্য পশুর প্রয়োজনীয় খাবার মিলছে না। পশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক পশু মারাও যাচ্ছে। নিরূপায় হয়ে অনেকে পানির দামে পশু বিক্রি করার পরিকল্পনা করেছেন।

বন্যাকবলিত অর্থ শতাধিক গরুর খামারিদের মধ্যে অনেকে বলেন, বন্যায় আমাদের সব হারিয়ে ফেলেছি। ইতোমধ্যে অনেক খামার বন্যায় তলিয়ে গেছে। তাই রাস্তা;বা উচু জায়গায়;গরু ও ছাগলগুলো অস্থায়ীভাবে রাখা হয়েছে। তবে বৃষ্টি কারণে তাদের নানা সমস্যা হচ্ছে। গরু ও ছাগলগুলো ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এ পযর্ন্ত অনেক গরু মারা গেছে। অনেক পশু যায় যায় অবস্থা।

সিলেট জেলার খামারি সোহাগ বলেন, ৫০টি গরু রয়েছে আমার খামারে। এগুলো কোরবানিতে বিক্রি করবো। কিন্তু ঈদের আগেই বন্যায়। দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এ পযর্ন্ত একটি গরু মারা গেছে। যে গরুটি মারা গেছে কোরবানিতে প্রায় দুই লাখ টাকার মতো বেঁচা যেত। এছাড়া দশটির মতো গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

কোম্পানীগঞ্জের খামারি আজিজুর বলেন, বন্যায় আবাদ করা ঘাস নষ্ট হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে খড়সহ অন্যান্য গো-খাদ্যে। গরু কোরবানির সময় পযর্ন্ত নেয়া যাবে না মনে হচ্ছে। তাই লোকসানের আশঙ্কা আছি। আরো বলেন, ২৬টি গরু কিনে পালন করছিলাম। ভালোই চলছিল খামার, মোটা অঙ্কের লাভ করার আশা ছিল। লাভের টাকায় খামারটি আরো বড় করার স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু বন্যা এসে বাধা হয়ে দাঁড়াল।

একই এলাকার আরেক খামারি আমজাদ বলেন, গরুর খামারের জন্য ২৫ শতাংশ জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করেছিলেন। বন্যার পানিতে ডুবে মরে গেছে ঘাস। এখন চড়া দামে ঘাস সংগ্রহ করতে হচ্ছে। খড়ের আটি দাম দ্বিগুন। দানাদার খাবার, ধানের কুঁড়া, খৈল, চিটাগুড় সবই ৫০ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

জৈন্তাপুরের গরুর খামারি বছির রহমান বলেন, খামারে রয়েছে ১৫টি গরু। এর মধ্যে এবারের কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য তৈরি করছি ছয়টি গরু। এর মধ্যে একটি মারা গেছে। এতে আমার প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আরো দুইটি গরু অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাঁচিয়ে রাখতে পারবে কিনা বুঝতে জানি না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর টাকার অঙ্কে সামগ্রিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এখনো করা হয়নি। তবে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বড় ধরনের হবে।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমেদ বলেন, পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পানি ক্রমশ বাড়ছে। স্থানীয় প্রশাসন জানান, সিলেট নগরের ১০টি এলাকা ছাড়াও জেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও সদর উপজেলার অন্তত ৫০০ গ্রাম এরই মধ্যে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ডুবে গেছে রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়ি। পানি ঢুকে গেছে অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ে। বন্যার্ত পরিবারগুলোর মধ্যে যারা খামারি তারা তাদের পশুগুলো নিয়ে উঠেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। মানুষ আর পশুতে একাকার হলেও আসন্ন কোরবানি ঘিরে শঙ্কা কাটছে না।

মন্তব্য করুন






আর্কাইভ