পুঁজিবাজারে ক্রয়মূল্যে বিনিয়োগসীমা নির্ধারণ

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যেকেই ‘বাজার মূল্য’ নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলদেশ ব্যাংকের পরিচালক (ডিওএস) মো. আব্দুল মান্নান স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ সার্কুলার জারি করা হয়।
সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারা ২৬ক এর উপ-ধারা (১) এর উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ব্যাংক-কোম্পানি কর্তৃক অন্য কোনো কোম্পানির শেয়ার ধারণের হিসাবায়নে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা (এক্সপোজার লিমিট) নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ক্রয়কৃত মূল্যেকেই ‘বাজারমূল্য’হিসাবে বিবেচনা করতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারা ৪৫ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এই নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
“বর্তমানে ব্যাংকগুলো ইক্যুইটির ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। যা বাজার দরে গণনা করা হয়। ফলে কোনো ব্যাংক ২৫ শতাংশ কেনার পরে পুঁজিবাজার দর বেড়ে গেলে, তখন বিক্রি করতে বাধ্য হয়। এতে করে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। যে কারনে দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ সীমা গণনায় পুঁজিবাজার দরের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যেকে বিবেচনায় নেবার দাবি ছিল।”
দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগ সীমা গণনায় ক্রয় মূল্যের বিবেচনার দাবি বাংলাদেশ ব্যাংক সাড়া দেয়নি। তবে আব্দুর রউফ তালুকদারকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগের পর থেকেই সেই দাবি গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। এটি সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেয় আব্দুর রউফ তালুকদার। এ লক্ষ্যে ;গত ১৭ জুলাই বিনিয়োগ সীমা গণনায় বাজার দরের পরিবর্তে ক্রয় মূল্যেকে বিবেচনায় নেবার জন্য মতামত চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর বিভিন্ন যাচাই বাছায়ের পর বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ক্রয় মূল্যেকেই ‘বাজার মূল্য’ নির্ধারণ করে সার্কুলার জারি হয়।
দীর্ঘসময় ধরে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা শেয়ারের বাজারমূল্যে, নাকি ক্রয়মূল্যে গণনা হবে সেটি নিয়ে বির্তক চলছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক চেয়েছে বাজারমূল্যে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগসীমা হিসাব থাকুক। তবে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চাচ্ছিল ক্রয়মূল্যে এই বিনিয়োগসীমা হিসাব করা হোক। দীর্ঘ বিতর্কের পর নির্ধারন হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যে।;
বাজারমূল্যে বিনিয়োগসীমা গণনাতে ব্যাংকগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করতে পারে না জানিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজারমূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগসীমা গণনা হলে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলে সেই শেয়ার বিক্রি করে দিতে বাধ্য ব্যাংকগুলো। তবে ক্রয়মূল্যে ভিত্তিতে গণনা করলে শেয়ারের দাম বেড়ে গেলেও তা বিক্রি করতে বাধ্য নয় ব্যাংকগুলো।
একই প্রসঙ্গে গত রবিবার ‘সিএমজেএফ টক উইথ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, অবশেষে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব বাজার মূল্যের বদলে ক্রয়মূল্যে হচ্ছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। এখন প্রক্রিয়া শেষে শিগগির বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন শিগগিরই জারি করা হবে।
অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত বলেন, পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের হিসাব সংক্রান্ত বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন, আমি ছিলাম, গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। আমরা আলাপ-আলোচনা করেই করেছি। এখন যেটা হচ্ছে, সেটা প্রসিডিউর। আমাদের আলোচনা হয়েছে, হয়ে যাবে। আমরা তিনজনই একমত। এই গভর্নর যখন সচিব ছিলেন, তখন ফাইলটা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। ওনার সুপারিশ নিয়েই বাংলাদেশ ব্যাংকে ফাইল যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপরের লেভেল ঠিক ছিল। কারণ ডেপুটি গভর্নর উপস্থিত ছিলেন মিটিংয়ে। কিন্তু ওখানে (বাংলাদেশ ব্যাংক) যাওয়ার পর জুনিয়র অফিসার কেউ হয়তো নেগেটিভ দিয়ে ফাইলটা এমনভাবে করে ছিলেন, যাতে গভর্নর করতে পারেননি। যাই হোক, নতুন গভর্নর আসার দুদিন পরই আমরা ওনার সঙ্গে দেখা করি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন জাস্ট এটা প্রসিডিউরে আছে।
মন্তব্য করুন