পুঁজিবাজারে ৮৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরে পতন

বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী। টানা ৯ কার্যদিবস পতন পর হঠাৎ গত দুই কার্যদিবস উত্থানে ফিরেছিল পুঁজিবাজার। কিন্তু সেই উত্থান ধরে রাখতে পারলো না। ফের নেমে আসলো পুঁজিবাজারে পতন। দীর্ঘ পতন পর হঠাৎ উত্থানে আসায় শান্তিতেই ছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গতকাল বুধবারের পতনে তাদের সেই শান্তিতে ছেদ পড়লো এমনটিই জানালেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, ঈদের পর টানা ৯ কার্যদিবস পুঁজিবাজার পতন। সেই পতনে থেকে উত্থানে ফিরেছিল গত দুই কার্যদিবস (সোমবার ও মঙ্গলবার)। সেই উত্থানে ফের বাধা। ফলে ফিরে আসলো পতনে পুঁজিবাজার। গতকাল বুধবার দেশের প্রধার পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতন হয়। আগের কার্যদিবস থেকে এদিন (বুধবার) দুই স্টকে লেনদেনও কমেছে। ডিএসইতে গতকাল বুধবার লেনদেন হয় ৭৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ৮৩৮ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৭টির, কমেছে ৩৩৮টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২৫টির। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৪ দশমিক ২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২৭ দশমিক ১৭ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ১৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ১৬২ দশমিক ৮৫ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩১৯ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে।
এদিকে দুই স্টকের ৮৪ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৮৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ এবং সিএসইর ৭৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। অপরদিকে দুই স্টকের ৯ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। এর মধ্যে ডিএসইর ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং সিএসইর ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে।
ডিএসইতে আট খাতের শতভাগ কোম্পানির শেয়ার দর পতন হয়েছে। শতভাগ পতন হওয়া এই খাতগুলো হলো- ইঞ্জিনিয়ারিং, খাদ্য আনুষঙ্গিক, আইটি, সিরামিক, সেবা আবাসন, পেপার, পাট এবং চামড়া। এদিন জ্বালানি শক্তি ৯৬ শতাংশ, বিমা ৯৪ শতাংশ, ওষুধ রসায়ন ৯৪ শতাংশ, বিবিধ ৯৩ শতাংশ, ব্যাংক ৮৮ শতাংশ, নন ব্যাংকিং আর্থিক, সিরামিক ৮৬ শতাংশ, বস্ত্র ৮১ শতাংশ, ভ্রমণ অবসর ৭৫ শতাংশ, টেলিকম ৬৭ শতাংশ এবং ফান্ড খাতের ৪৪ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। খাতগুলোর শেয়ার দর পতনে একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে।
সিএসইতে গতকাল বুধবার লেনদেন হয় ১৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার লেনদেন হয়েছিল ২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৬টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৩৭টির, কমেছে ২১৯টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২০টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১৭০ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৮০১ দশমিক ৬০ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১২ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ৮৭ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ১০২ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ;১১ দশমিক ১৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩০৮ দশমিক ৫০ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ১১১ দশমিক ৮৮ পয়েন্টে, ১০ হাজার ৬৬৫ দশমিক ২৬ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১২১ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টারা বলছেন, নানা সমস্যার কারণে শত চেষ্টা করেও রেগুলেটররা পুঁজিবাজার উত্থান আনতে হিমশিম খাচ্ছে। পুঁজিবাজার সঠিক পথে আনতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগও মুখ থুবড়ে পড়ে। কোনো ইতিবাচক উন্নয়নই কাজেই লাগছিল না পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে। কিন্তু হঠাৎ করেই গত দুই কার্যদিবস (সোমবার ও মঙ্গলবার) উল্টো দিকে ফিরে আসলো পুঁজিবাজার। উত্থানে ফিরে আসার কারণ হিসেবে সকলের বিশেষ নজরদারির বিষয়টি ওঠে আসলো।
বিশেষ করে পুঁজিবাজারে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), মার্চেন্ট ব্যাংক ও স্টক ডিলারের ক্যাপিটালে নজরদারি করার সিদ্ধান্তের বিষয়টি এই উত্থানের মূল কারন। কিন্তু সেই উত্থান ধরে রাখতে পারেনি। উত্থানের দুইদিন পরে পুঁজিবাজারে ফের বড় ধরনের পতন। এটাতে কিছুটা বিচলিত বিনিয়োগকারীরা। এধরনের পতনের কারণ জানতে মরিয়া হয়ে আছেন তারা।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটের ধাক্কাসহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার পর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে উল্লেখ্য করে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, আবার বর্তমান পুঁজিবাজারে কিছুটা অর্থ সংকট রয়েছে। তবে এ সংকট খুব একটা বড় সমস্যা না। এটা সমধানের লক্ষে সংশ্লিষ্ট সবার সাথে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে কিছু অর্থ সংস্থান হয়ে গেছে। এখন পুঁজিবাজারে ঢোকার পথে রয়েছে। অবশ্য নানা উদ্যোগে টানা পতন পর গত দুইদিন (সোমবার ও মঙ্গলবার) ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। কিন্তু সেই উত্থান গতকাল বুধাবার ফের পতনে নেমে এসেছে।
পুঁজিবাজারের পতন রোধে কমিশন সক্রিয় কাজ করছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি পতন খুব গভীরভাবে অনুসন্ধান চলছে বিএসইসির কমিশন। পতনের প্রকৃত কারণ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমার দেখছি, পতনে কারো যোগসূত্র রয়েছে কিনা। থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে পুঁজিবাজারের স্বাভাবিক গতির স্বার্থে এসব ব্যবস্থার খবর বাহিরে আসে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন