পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট, ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি

২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের (৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) চেয়ে ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির ১৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। বাজেটে ঘাটতির দেখানো হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভায় বাজেট অনুমোদন হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়।;
আগামী অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর-সংগৃহীত কর থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরবহির্ভূত কর থেকে আসবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বাজেটে এ হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে এ ঘাটতি মেটানো হবে বলে জানানো হয়।
ঘাটতির মধ্যে বৈদেশিক উৎস থেকে আসবে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান আসবে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসবে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ও অন্যান্য খাত থেকে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। বাজেটে জিডিপির আকার ধরা হয়েছে ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। এই ব্যয়ের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ ব্যয় করা হবে ৭৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। পণ্য ও সেবার জন্য ব্যয় করা হবে ৩৮ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি। ভর্তুকি প্রণোদনা ও নগদ ঋণ বাবদ ১ লাখ ৭৭ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) খরচ করা হবে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এডিপিবহির্ভূত বিশেষ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচিতে ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে।
খাত ভিত্তিক কত বরাদ্দ- প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয়। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের ১৪ দশমিক ৭০ শতাংশ থাকছে এ খাতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয় সুদের জন্য। এ খাতে বরাদ্দ ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ। ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয় পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। ভর্তুকি ও প্রণোদনায় থাকছে ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে বরাদ্দ রাখা হয় ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। এছাড়া জনপ্রশাসনে ৭ দশমিক ৩ শতাংশ, স্বাস্থ্যে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ, প্রতিরক্ষায় ৫ শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুতে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, কৃষিতে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, গৃহায়ণে ১ শতাংশ, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্মে শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিসে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ, পেনশনে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ এবং বিবিধ ব্যয়ের জন্য ৪ দশমিক ৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়।
মন্তব্য করুন