প্রভিশন ঘাটতিতে বিপাকে আট ব্যাংক
ব্যাংকগুলোতে লাগামহীন বাড়ছে খেলাপি ঋণ। এসব মন্দ ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি সংরক্ষণ (প্রভিশন) বা শ্রেণিকৃত ঋণের বিপরীতে অর্থসংস্থান করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে আট ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে ঋণের বিপরীতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে দেশে (সরকারি ও বেসরকারি) ৮ ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক চারটি এবং বেসরকারি ব্যাংক চারটি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হলো- অগ্রণী, বেসিক, জনতা, রূপালী। বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে এসব ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়ায় ১৯ হাজার ৮৩৩ কোটি ১২ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা, ব্যাংকের অশ্রেণিকৃত বা নিয়মিত ঋণের বিপরীতে দশমিক ২৫ থেকে পাঁচ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। নিম্নমান বা সাব স্ট্যান্ডার্ড ঋণের বিপরীতে রাখতে হয় ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ বা কুঋণের বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। এছাড়া যেসব ব্যাংক প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণে ব্যর্থ হয়। তাদের মূলধন ঘাটতিতে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি হয়েছে ১১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘাটতি রয়েছে বেসিক ব্যাংকের। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর পরেই রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি তিন হাজার ৫২১ কোটি টাকা। তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। তিন হাজার ১৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে ব্যাংকটি। চতুর্থ অবস্থানে থাকা জনতা ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৫৯৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ আট হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ সাত হাজার ৪৭৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৩৪৪ কোটি ৬৮ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ১৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ১৪৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে।
সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ৮৮ হাজার ৬৮৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। কিন্তু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৫ হাজার ১৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ নিরাপত্তা সঞ্চিতি হিসেবে রেখে দেওয়ায় সার্বিকভাবে ব্যাংক খাতে ঘাটতির পরিমাণ কিছুটা কম। ফলে ব্যাংক খাতের সার্বিকভাবে নিরাপত্তা সঞ্চিতির ঘাটতিতে ১৩ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপির কারণে ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতিতে পড়েছে। এসব ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। খেলাপি না কমাতে পারলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। তাই যেকোনো মূল্যে ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় বাড়াতে হবে। কারণ এসব ব্যাংক থেকে ঋণ একবার নিলে তা আর ফেরত দেয় না। কারণ তাদের সুশাসনের অভাব ও ঋণ দেওয়া ও আদায়ে কোনো জবাবদিহিতা নেই।
মন্তব্য করুন