শুল্ক পরিশোধে অনিহা, রাজস্ব আদায়ে ধসের শঙ্কা

এলএনজি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলার কাছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের পাওনা তিন হাজার কোটি টাকা;ছাড়িয়ে গেছে। পাওনা পরিশোধের জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে দশ দফা চিঠি দিলেও বকেয়া পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা। সর্বশেষ চিঠিতে অবিলম্বে এই টাকা পরিশোধ করা না হলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে;হুমকি দিয়েছে। এতে এলএনজি আমদানিতে অচলাবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের গ্যাস সংকট ঘোচাতে হাজার হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানি করা হলেও শুল্ক ও ভ্যাট পরিশোধ না করায় এই শঙ্কা জোরালো হয়ে উঠছে।

দেশের গ্যাস সংকট ঘোচাতে বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে কাতার থেকে এলএনজির প্রথম চালান আসে ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। এরপর কাতার, কুয়েত, ওমান এবং স্পট মার্কেট থেকে জাহাজ বোঝাই করে এলএনজি আমদানি এবং মহেশখালীর টার্মিনালে তা খালাস করে দেশের ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। এলএনজি আমদানিতে দুই শতাংশ শুল্ক এবং ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকার এলএনজি আমদানিতে ১৭ শতাংশের শুল্ক জাতীয় রাজস্বের বেশ বড় অংকের যোগানদাতা।

তবে পেট্রোবাংলা শুল্ক পরিশোধ না করায় চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের ধসের শংকা দেখা দিয়েছে। গত ১৫ মাসে চট্টগ্রাম কাস্টমস পেট্রোবাংলার নিকট দশ দফা পত্র দিয়ে শুল্ক পরিশোধের তাগাদা দিয়েছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা কাস্টমসের দাবি অনুযায়ী শুল্ক পরিশোধ করেনি। বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে কিছু টাকা পরিশোধ করা হলেও তা পাওনার বিপরীতে একেবারে নগণ্য বলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করেছে।

সর্বশেষ গত ১৮ মে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে বিভিন্ন চালানের কথা উল্লেখ করে ৩ হাজার ১৭ কোটি ১ লাখ টাকার শুল্ক বকেয়া থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২৩টি বিল অব এন্ট্রি এবং ৩০টি আইজিএম এর বিপরীতে এই টাকা পাওনা রয়েছে। এরমধ্যে ডিসেম্বর ২১ সালে ২টি, জানুয়ারি ২০২২ সালে ১৪টি, ফেব্রুয়ারি ২২ সালে ২টি এবং মার্চ ২২ সালে ৫টি মিলে সর্বমোট ২৩ বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে ১ হাজার ২শ ১৭ কোটি ১ লাখ টাকা পাওনা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে এক টাকার শুল্কও পরিশোধ করা হয়নি। অপরদিকে সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল থেকে এপ্রিল ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩০টি আইজিএম এর বিপরীতে ১৮শ কোটি টাকার শুল্ক বকেয়া রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কাস্টমস এ্যাক্ট অনুযায়ী বিল অব এন্ট্রি ও দলিলপত্র সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কমিশনার বরাবরে দাখিলপূর্বক আমদানিকৃত পণ্যচালান শুল্কায়ন এবং শুল্ক করাদি পরিশোধের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বিশেষ বৈশিষ্ট সম্পন্ন পণ্য হওয়ায় গ্যাস পরিবহনকারী ফ্লোটিং স্ট্রাকচার রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে সরাসরি পাইপ লাইনের মাধ্যমে ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ হয়ে থাকে। তবে পেট্রোবাংলা কোনো শুল্ক করাদি পরিশোধ করেনি। এই ধরনের আইন ও বিধিভঙ্গের জন্য অনাদায়ি ও অপরিশোধিত রাজস্বের উপর জরিমানা আরোপের বিধান রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার স্বাক্ষরিত পত্রে অবিলম্বে পাওনা পরিশোধ করা না হলে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলার শীর্ষ একজন কর্মকর্তা;বলেন, বরাদ্দ না থাকায় আমরা পুরো অর্থ পরিশোধ করতে পারিনি। কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলেছেন, এলএনজি আমদানির প্রথম চালান থেকে শুরু করে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধে গড়িমসি করতে থাকে পেট্রোবাংলা। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বকেয়া রাজস্ব আদায়ে বারবার চিঠি দিয়ে চাপ দিয়েছে। কাস্টমসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পেট্রোবাংলা বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময় কিছু কিছু অর্থ পরিশোধ করলেও পুরো পাওনা কখনো পরিশোধ করেনি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ-কমিশনার নুর উদ্দিন মিলন বলেন, বকেয়া রাজস্ব আদায়ে আমরা বারবার পেট্রোবাংলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার এনবিআরের চেয়াম্যান;কথা বলেছেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পেট্রোবাংলার পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। যদিও মাঝে তারা অল্প কিছু বকেয়া পরিশোধ করেছে। তা অত্যন্ত নগণ্য। অপর একজন কর্মকর্তা বলেন,;বিষয়টি জটিলতার দিকে যাচ্ছে।;এতে এলএনজি আমদানি নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

মন্তব্য করুন






আর্কাইভ