সয়াবিনে ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা

বিশ্ববাজারে দাম কমার ২৫ দিন পর দেশের বাজারে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।;

গতকাল রিববার সংগঠনের নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। গত ৯ জুন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ৬ টাকা কমিয়ে ১৯৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। নতুন দাম আজ (সোমবার) থেকে কার্যকর হবে। সে সময় সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। ওই সময় প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়িয়েছিল সরকার।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এক লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা ও ৫ লিটার সয়াবিন তেলের বোতলের দাম ৯৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর গত ৫ মে তেলের খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা হয়েছিল। ওই সময় বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ এবং ৫ লিটারের বোতলের দাম ৭৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯৮৫ টাকায়। এদিক আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়ার বাতাস শুরু হলেই সেই অজুহাতে দেশে বাড়িয়ে দেয়া হয় ভোজ্যতেলের দাম। তবে সেখানে কমলেও দেশের বাজার তা নিয়ে উদাসীন থাকে। এমনকি দাঁড় করানো হয় যুক্তি-তর্ক। চলতি মাসে বিশ্ববাজারে ৪৮৩ মার্কিন ডলার দাম কমেছে টন প্রতি।

গতকাল রবিবার বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ ঘোষণায় বলেন, আশা করছি তেলের দাম দুই এক দিনের মধ্যে কমবে। সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) দ্বাদশ মিনিস্টারিয়াল কনফারেন্স উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

তপন কান্তি বলেন, তেলের দামের ক্ষেত্রে আমরা এখন হিসাব-নিকাশ করছি, তার একটা প্রতিফলন আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে দেখা যাবে। তেলের দাম কমে আসবে বলা যায়। তবে কতটা কমবে সেটার হিসাব-নিকাশ চলছে। ট্যারিফ কমিশন প্রাথমিকভাবে তথ্য নিয়ে মিল-মালিক বা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসবে। সেখান থেকে রিপোর্ট আসার পর মন্ত্রীকে জানিয়ে ঘোষণা দেওয়া হবে। এটা গোপনীয়তার কিছু নেই বা আমরা ঘটা করে জানাইও না। মন্ত্রী যখন সংবাদ সম্মেলন করে জানান তখন এটা আপনাদের জানানো হয়।

আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমে গেছে জানিয়ে তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এ তেলটা আমাদের আসে প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে। সেখান থেকে তেল আসতে কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৬০ দিন লেগে যায়। এখানে যে সময়ের গ্যাপ রয়েছে তাই চাইলেও দেশের বাজারে তাৎক্ষণিক দাম কমানো যায় না। এই সময়ের গ্যাপটা চিন্তা করতে হয়। তবে সুখবর হলো ইন্দোনেশিয়া থেকে এখন কিছু তেল আসে, সেখান থেকেও আসতে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমেছে আবার ডলারের দামও বেড়েছে সেটাও মাথায় রাখতে হবে। এই দুটি বিষয় সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হবে।

তেলের দাম বাড়ানোর সময় ব্যবসায়ীদের যে তোড়জোর দেখা যায় কমানোর সময় সে তোড়জোর দেখা যায় কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে তপন কান্তি বলেন, আমরা আপনাদের ডাকতে পারি সব সময়। এখন মন্ত্রী অসুস্থ। তেলের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে যেন কমে সেটা আমরা দেখবো। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমতে শুরু করায় দেশের বাজারেও দাম কমার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি। কয়েক মাস আগে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছায়। তবে সম্প্রতি তেল উৎপাদনকারী প্রধান দেশগুলোতে বীজ সংগ্রহের মৌসুম শুরু হওয়ায় গতমাসে বিশ্ববাজারে আবারও দাম কমতে শুরু করেছে। এ সময় ১১ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে ভোজ্যতেলের দাম।

গত ১৫ জুন আন্তর্জাতিক বাজারে এক টন অপরিশোধিত পাম তেলের দাম ১ হাজার ২৯০ ডলারে পৌঁছায়, যা এক মাস আগেও ছিল ১ হাজার ৭১৭ ডলার। ইন্ডেক্সমুন্ডির তথ্য মতে, চলতি বছরের এপ্রিলে দাম ছিল ১ হাজার ৬৮৩ ডলার এবং মার্চে ছিল ১ হাজার ৭৭৭ ডলার। ১৬ জুন সয়াবিন তেলের দাম টনপ্রতি ১১ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭২৮ ডলারে নেমে আসে, যা মে মাসের মাঝামাঝি ছিল ১ হাজার ৯৬৩ ডলার, এপ্রিলে ছিল ১ হাজার ৯৪৮ এবং মার্চে ছিল ১ হাজার ৯৫৭ ডলার।

বিশ্বব্যাপী দাম কমলেও বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৯ জুন প্রতি লিটার (বোতলজাত) সয়াবিন তেলের দাম ৭ টাকা বাড়িয়ে ২০৫ টাকা নির্ধারণ করে। অন্যদিকে, পাম তেলের দাম লিটার প্রতি ১৪ টাকা কমিয়ে ১৫৮ টাকা করা হয়। এলডিসি থেকে গ্রাজুয়েশনের পর ১২ বছর বাজার সুবিধা পাবার সময় বৃদ্ধির প্রস্তাব থাকলেও তা পরে ৬ থেকে ৯ বছরে বৃদ্ধি দাবি জোরালো হয়েছে। সম্মেলনে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার আওতায় প্রাপ্ত সুবিধাসমূহ আরও কিছু সময় পর্যন্ত বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে মর্মে সম্মেলনে অভিমত প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলে পরবর্তীতে এ বিষয়ে আরও আলোচনার পথ সুগম হলো। আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এমসি ১৩ সম্মেলনে ভালো কিছু ফল পাওয়া যাবে। সম্মেলনে বাংলাদেশের দেয়া প্রস্তাবগুলো জোরালোভাবে সমর্থন করা হয়।

বাণিজ্য সচিব বলেন, এমসি ১২ সম্মেলনে মৎস্য খাতে ভর্তুকির বিষয়ে একটি চুক্তি অনুমোদিত হয়েছে। এত অবৈধ ফিসিং ভেসেলে কোন ভর্তুকি প্রদান করা যাবে না এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ করা যাবে না। এলডিসি ভুক্ত কোনো দেশ এ সিদ্ধান্ত অমান্য করলে সে দেশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে না। এছাড়া, কোভিড-১৯ এবং ভবিষ্যৎ মহামারি মোকাবেলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট সেক্টরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তি হস্তান্তরের বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করে ট্রিপস চুক্তি মোতাবেক বাণিজ্য সহজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে, খাদ্যদ্রব্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জেনেভায় অনুষ্ঠিত মিনিস্টিরিয়াল কনফারেন্স (এমসি ১২) এ আউটকাম ডকুমেন্টসহ ৭টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জেনারেল কাউন্সিলের ৩টি সিদ্ধান্ত অনুমোদন করা হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির নেতৃত্বে ৬ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল কনফারেন্সে অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান এ সব কথা বলেন।

মন্তব্য করুন






আর্কাইভ